হংকংয়ের একটি আদালত বর্তমানে বন্ধ থাকা স্ট্যান্ড নিউজের দুই সাবেক সম্পাদক চুং পুই-কুয়েন ও প্যাট্রিক ল্যামকে রাষ্ট্রদ্রোহমূলক প্রবন্ধ প্রকাশের ষড়যন্ত্রে দোষী সাব্যস্ত করেছে। চীনা শাসিত শহরটিতে নিরাপত্তা দমন অভিযানের মধ্যে বৃহস্পতিবারের (২৯ আগস্ট) রায়টি আন্তর্জাতিকভাবে নজর কেড়েছে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে। ২৬ সেপ্টেম্বর রায় ঘোষণা করা হবে। রায়ে তাদের দুই বছরের কারাদণ্ড হতে পারে। ১৯৯৭ সালে হংকং ব্রিটেন থেকে চীনের হাতে হস্তান্তরের পর এটি প্রথমবারের মতো কোনও সাংবাদিক বা সম্পাদককে রাষ্ট্রদ্রোহের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করা হলো।
সমালোচকরা, বিশেষ করে মার্কিন সরকার বলছে, এই মামলা হংকংয়ে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার ক্রমবর্ধমান অবনতির প্রতিফলন।
স্ট্যান্ড নিউজ একসময় হংকংয়ের শীর্ষস্থানীয় অনলাইন মিডিয়া হিসেবে সমালোচনামূলক প্রতিবেদন ও মন্তব্য নিয়ে কাজ করত। ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে পুলিশের অভিযান ও তাদের সম্পদ জব্দের পর বন্ধ হয়ে যায়। ৫৪ বছর বয়সী চুং, ৩৬ বছর বয়সী ল্যাম এবং স্ট্যান্ড নিউজের মূল সংস্থা বেস্ট পেনসিল (হংকং) লিমিটেডের বিরুদ্ধে ২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৭টি সংবাদ প্রবন্ধ ও মন্তব্য প্রকাশের ষড়যন্ত্রে রাষ্ট্রদ্রোহমূলক অভিযোগ আনা হয়েছিল।
চুং ও ল্যাম দুজনেই নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন। তবে বৃহস্পতিবার কেবল চুং আদালতে উপস্থিত ছিলেন। আদালত যে প্রবন্ধগুলোকে রাষ্ট্রদ্রোহমূলক বলে গণ্য করেছে, সেগুলোর বেশিরভাগই চুং সম্পাদনা বা অনুমোদন করেছিলেন।
জেলা আদালতের বিচারক কোয়াক ওয়াই-কিন রায়ে লিখেছেন, যখন কোনও বক্তব্যকে রাষ্ট্রদ্রোহমূলক হিসেবে বিবেচনা করা হয়, তখন প্রাসঙ্গিক বাস্তব পরিস্থিতিকে বিবেচনায় নিতে হবে, যা জাতীয় নিরাপত্তার সম্ভাব্য ক্ষতি হিসেবে দেখা হয় এবং তা অবশ্যই থামাতে হবে।
৫৭ দিনের বিচারকালে, সরকারি প্রসিকিউটর লরা এনজি বলেন, স্ট্যান্ড নিউজ একটি রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করত, যা ‘অবৈধ’ মতাদর্শ প্রচার করত এবং পাঠকদের চীন ও হংকং সরকারের প্রতি ঘৃণা উসকে দিত।
আদালতের মতে, যে প্রবন্ধগুলো রাষ্ট্রদ্রোহমূলক হিসেবে গণ্য হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে নির্বাসিত অ্যাক্টিভিস্ট নাথান ল এবং সানি চিয়ুং, অভিজ্ঞ সাংবাদিক অ্যালান আউ এবং চুংয়ের স্ত্রী চ্যান পুই-ম্যানের লেখা রয়েছে। আন্তর্জাতিকভাবে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করা বেশ কয়েকটি সংস্থা এই রায়ের সমালোচনা করেছে।
রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স (আরএসএফ)-এর এশিয়া-প্যাসিফিক অ্যাডভোকেসি ম্যানেজার আলেকসান্দ্রা বেলাকোভস্কা বলেন, এই রায় একটি অত্যন্ত বিপজ্জনক নজির স্থাপন করছে, যা বেইজিং আরও স্বাধীন কণ্ঠস্বরকে দমন করতে ব্যবহার করতে পারে। তিনি আরও বলেন, ডজনখানেক মিডিয়া বন্ধ হয়ে গেছে, অসংখ্য সাংবাদিক নির্বাসনে চলে গেছে এবং যারা হংকংয়ে রয়েছেন তাদের জন্য নতুন বাস্তবতা হলো, জাতীয় নিরাপত্তা আইন লঙ্ঘন করার মতো কিছু করতে পারা রেড লাইন অতিক্রম করা হবে।