মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হস্তক্ষেপের চেষ্টার অভিযোগে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টিভি চ্যানেল আরটি নেটওয়ার্কের সঙ্গে জড়িত ১০ জন ও দুই সংস্থার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। নিষেধাজ্ঞার আওতায় আরটির প্রধান সম্পাদক মার্গারিটা সিমোনোভনা সিমোনিয়ান, সহকারী প্রধান সম্পাদক এলিজাভেটা ইউরিয়েভনা ব্রডস্কাইয়াও আছেন।
মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি (অর্থমন্ত্রী) জ্যানেট ইয়েলেন বলেছেন, ‘আমাদের দেশের সংস্থার ওপর থেকে যাতে মানুষের আস্থা চলে যায়, সেজন্য সরকারি মদতে মিথ্যা প্রচার করছিলে আরটি। যুক্তরাষ্ট্রের সরকার এই ব্যবস্থা নিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছে, তারা এই ধরনের প্রচারের পেছনে যারা আছে, তাদের দায়বদ্ধ করবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরটি নেটওয়ার্কের সঙ্গে জড়িতরা যুক্তরাষ্ট্রের মানুষকে প্রভাবিত করার জন্য সামাজিক মাধ্যমে প্রভাবশালীদের নিয়োগ করেছিলেন। তাদের মাধ্যমে তারা ক্রেমলিনপন্থি বার্তা দেয়ার চেষ্টা করছিলেন।’ মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল গারল্যান্ড জানিয়েছেন, ‘রাশিয়ার আরটি নেটওয়ার্কের দুইজন কর্মী নিউ ইয়র্কে বিদেশি মুদ্রা আইন এবং বিদেশি এজেন্ট রেজিস্ট্রেশন আইন ভাঙার দায়ে অভিযুক্ত হয়েছেন।’
তিনি আরও দাবি করেন, ওই দুই অভিযুক্ত টেনেসি-ভিত্তিক একটি কোম্পানিকে রাশিয়ার পক্ষে প্রচার চালানোর জন্য ১০ মিলিয়ন ডলার দিয়েছিল। ওই কোম্পানি যুক্তরাষ্ট্রে সামাজিক মাধ্যমের ইনফ্লুয়েন্সারদের দিয়ে এই প্রচার চালাবে বলে ঠিক হয়। এরপর ওই সংস্থা যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন, মুদ্রাস্ফীতির মতো বিষয়গুলো নিয়ে প্রায় দুই হাজার ভিডিও বানায়। গত নভেম্বর থেকে এক কোটি ৬০ লাখ বার সেই ভিডিওগুলো দেখেছেন মানুষ।
হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন আরটি নেটওয়ার্কের এই কাজের কথা জানতেন। মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র জন কিরবি বলেছেন, ‘আমাদের বিশ্বাস পুতিনই এই নির্দেশ দিয়েছেন।’মার্কিন নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এই প্রথমবার রাশিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ করলো এমন নয়। মার্কিন গোয়েন্দা বিভাগের প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০২০ সালেও রাশিয়া সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অনুকূলেভোটদাতাদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছিল।
২০১৬ সালের ভোটেও রাশিয়া হস্তক্ষেপ করেছিল বলে মার্কিন গোয়েন্দারা মনে করেন। সেখানেও তারা ট্রাম্পের পক্ষেই ছিল বলে তারা মনে করছেন। পরে ট্রাম্পের টিমের সঙ্গে রাশিয়ার বেআইনি আঁতাত নিয়ে তদন্তও হয়। কিন্তু সেই তদন্তে পর্যাপ্ত প্রমাণ পাওয়া যায়নি।এদিকে রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারকারীর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার প্রতিক্রিয়ায় মস্কো মার্কিন মিডিয়াকে লক্ষ্যবস্তু করবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা।
বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, এই পদক্ষেপটিকে যুক্তরাষ্ট্রের কর্তৃপক্ষের ক্রিয়াকলাপের প্রতিক্রিয়া, যা তথ্যের অবাধ প্রবাহের সরাসরি বিরোধিতা করে।
সূত্র: এএফপি, রয়টার্স