প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ ও সংসদ ভেঙে দেওয়ার প্রেক্ষাপটে বিগত শেখ হাসিনার সরকার বিলুপ্ত হলেও স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার পদ এখনও বহাল রয়েছে। সংবিধানের বিধান মতে তারা স্বপদে আছেন। পরবর্তী স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার দায়িত্ব গ্রহণ না করা পর্যন্ত তারা এ পদে থাকবেন। সংবিধানের বিধানগুলো পর্যালোচনা করে এবং আইনজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘পদত্যাগ’ করে ভারতে চলে যান। ওইদিন বিকালে জাতির উদ্দেশে দেওয়া বক্তব্যে সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান শেখ হাসিনার পদত্যাগের বিষয়টি জানান। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন। এখন একটা অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করে আমরা আমাদের কার্যক্রম পরিচালনা করবো। সংবিধানের ৫৮(১)(ক) বিধান মতে প্রধানমন্ত্রীকে রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে পদত্যাগ করতে হয়। এই অনুচ্ছেদের (৪) বিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করলে বা স্বীয় পদে বহাল না থাকলে মন্ত্রীদের প্রত্যেকে পদত্যাগ করেছেন বলে গণ্য হবে।
অবশ্য প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন বলে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হলেও এ সংক্রান্ত কোনও প্রজ্ঞাপন বা গেজেট পাওয়া যায়নি। পদত্যাগের বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘আমি যেটুকু জানি সেটা আপনাকে বলছি। কাউন্সিলের মিটিংয়ে আমি যেটা জানতে পেরেছি সেটা হলো যে তিনি পদত্যাগ করেছেন এবং পদত্যাগপত্র রাষ্ট্রপতির কাছে আছে।’
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের পরদিন ৬ আগস্ট রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন সংবিধানের ৪৮(৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ ভেঙে দেন। সংসদ ভেঙে দেওয়ার বিষয়টি ওইদিনই আইন মন্ত্রণালয় থেকে গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়। প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ ও সংসদ ভেঙে দেওয়ার প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রিসভার সদস্য ও সংসদ সদস্যপদ শূন্য হয়েছে। তবে স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের পদ দুটি এখনও বহাল রয়েছে। দ্বাদশ সংসদের নির্বাচিত সংসদ সদস্য স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু সংসদ ভেঙে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে বর্তমানে সংসদ সদস্য নেই। তবে স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার পদে তারা বহাল আছেন।
সংবিধানের বিধান ৭৪(২) অনুযায়ী, সংসদ সদস্য না থাকলে; সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্য হলে; সংখ্যাগরিষ্ঠ সংসদ সদস্যরা অপসারণে সম্মত হলে; রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিলে; নির্বাচনের পর অন্য কোনও সদস্য তার কার্যভার গ্রহণ করলে; ডেপুটি স্পিকারের ক্ষেত্রে, তিনি স্পিকারের পদে যোগদান করলে স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের পদ শূন্য হবে। তবে পরবর্তী স্পিকার বা ডেপুটি স্পিকার দায়িত্ব গ্রহণের আগ পর্যন্ত এ পদ দুটি ‘শূন্য হবে না’ বলে সংবিধানে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে।
সংবিধানের ৭৪(৬) অনুচ্ছেদে বলা রয়েছে– ‘এই অনুচ্ছেদের (২) দফার বিধানাবলি সত্ত্বেও ক্ষেত্রমতো স্পিকার বা ডেপুটি স্পিকার তাঁহার উত্তরাধিকারী কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত স্বীয় পদে বহাল রহিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবে।’ অবশ্য প্রধানমন্ত্রীও তার উত্তরাধিকার কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করে যাবেন বলে সংবিধানে ৫৭(৩) উল্লেখ আছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার তানজীবুল আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের মেয়াদের বিষয়টি সংবিধানে স্পষ্ট উল্লেখ আছে। সংবিধান অনুযায়ী নতুন স্পিকার না আসা পর্যন্ত তাদের পদ শূন্য হওয়ার কোনও সুযোগ নেই।’
তিনি বলেন, ‘আইনে একটা কথা বলা হয়- সন্দেহের কোনও অবকাশ নেই। সংসদ ভেঙে গেলেও আমাদের স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার তাদের পদে আছেন, এখানে সন্দেহের কোনও অবকাশ নেই। সংসদ ভেঙে যাওয়ার কারণে তারা এই মুহূর্তে সংসদ সদস্য নন। তবে স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের পদে তারা বহাল আছেন। তাদের পদ শূন্য করতে হলে সংবিধান বা সংবিধানের সংশ্লিষ্ট ধারা বাতিল বা স্থগিত করতে হবে।’
এখানে উল্লেখ্য যে রাষ্ট্রপতির পদের ক্ষেত্রেও সরকারের মেয়াদ ও বিলুপ্তির কোনও সম্পর্ক নেই। সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির পদের মেয়াদ শেষ হলেও তার উত্তরাধিকারী কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত নিজ পদে বহাল থাকবেন। সংবিধান অনুযায়ী (৫৪) রাষ্ট্রপতির পদ শূন্য হলে স্পিকার রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করবেন।